একজন মাজহাব সাহেবের গল্প

একজন মাজহার সাহেবের গল্প।

রাতে ফরিদা সাথে ঝগড়া হয়েছে মাজহার সাহেবের। সিরিয়াল দেখা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। মাজহার সাহেব এক কথার মানুষ। উনি জি বাংলা দেখতে চাইলেও ফরিদা বেগম স্টার জলসা দেখবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। এই নিয়ে ঘন্টাখানের তর্কের পর মাজহার সাহেব রাগে টিভির রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লেন। এই অপমান কিছুতেই সহ্য করা যায় না। শুয়ে শুয়েই ভাবতে লাগলেন কি করে ফরিদা বেগমকে জব্দ করা যায়।

ফজরের আজানের পরপরই লুঙ্গি পরে ছোট একটি ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন মাজহার সাহেব। ব্যাগের ভেতর একটি লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মোবাইল চার্জার আছে। মাজহার সাহেব লুঙ্গি পরতে ভালবাসেন। লুঙ্গির চেয়ে আরাম অন্য কোন পোশাকে তিনি কখনোই পান নি। উনার একটি স্বপ্ন আছে, কোন একদিন এন্টার্ক্টিকা মহাদেশ শুধু লুঙ্গি পরেই পাড়ি দিবেন তিনি। এজন্য টাকা দরকার। মাত্র ৩৫ লাখ টাকা হলেই হবে। টাকার ব্যবস্থা করারও প্ল্যান করে রেখেছেন তিনি। অজান্তেই মুখে স্ফীত হাসির রেখা ফুটে উঠল তার।

রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটছেন মাজহার সাহেব। খিদা লাগছিল খুব। চট করে পাশের একটি হোটেলে ঢুকে গেলেন তিনি। ৩ টা পরটা, ডাল ও আলু ভাজি মিক্স করে খেয়ে চা আর সিগারেটের অর্ডার দিলেন। চা আর সিগারেট একসাথে খাওয়ার যেই মজা, সেটা নন স্মোকাররা কখনোই বুঝতে পারবে না। এই অবস্থায় যে কারো মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। মাজহার সাহেবও বসে বসে পরবর্তী প্ল্যানগুলো একটু একটু করে গুছিয়ে নিলেন।

হোটেল থেকে বের হয়ে খুলনাগামী বাসে চড়ে বসলেন মাজহার সাহেব। বাসে বসেই প্ল্যান অনুযায়ী ফোন দিলেন ফরিদা বেগমকে। কাঁদো কাঁদো গলায় বললে, "কিডনাপাররা আমাকে কিডনাপ করেছে। জলদি আমার বিকাশ একাউন্টে ৩৫ লাখ টাকা পাঠাও। নতুবা ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।" বলেই লাইন কেটে দিলেন তিনি। অভিনয়টা কেমন হল ঠিক বুঝতে পারছিলেন না তিনি। যায় হোক, আগের রাতে ঘুম না হওয়ায় দুই চোখে ঘুম এসে ভর করছিল উনার। মরুক গিয়ে সবকিছু। ভেবেই সিটে আরাম করে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি।

ঘুম ভাঙ্গল বাসের হেল্পারের ধাক্কাধাক্কিতে। "ঐ মিয়া খুলনা তো আইসা পড়ছি। এইডা কি বাড়ি পাইছেন নাকি? নামেন মিয়া।" বলে অনবরত ধাক্কাধাক্কি করতে লাগল বেয়াদম হেল্পারটা। বয়স্ক মানুষকে আজকালকার পোলাপাইন সম্মান দিতে পারে না... রাগে গজগজ করতে করতে বাস থেমে আসলেন তিনি। পকেট থেকে মোবাইল বের করে মেসেজ বক্স চেক করলেন। নাহ, আসে নি এখনো ৩৫ লাখ টাকা। মনে মনে দুইটা গালি দিয়ে আবার ফোন দিলেন ফরিদা বেগমকে। বললেন, "জলদি টাকা পাঠাও প্লিজ। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।"

খুলনা জেলাটা অনেক সুন্দর, মন ভুলিয়ে দেবার মতো। সারাদিন উদ্দেশ্যহীন ভাবে খুলনার অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ালেন তিনি। টাকার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি, কিন্তু আসছে না। একবার ভাবলেন সুন্দরবন থেকে ঘুরে আসবেন। কিন্তু সমস্যা হলে বাঘে ভীষন ভয় পান তিনি। চিড়িয়াখানায় একবার একটি বাঘ দেখে খুব ছোটবেলায় বাঘ দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই থেকেই বাঘফোবিয়ায় ভুগছেন। অতএব সুন্দরবন যাবার ইচ্ছে বাদ দিয়েই খুলনার রাস্তাঘাটে হেঁটে বেড়াতে লাগলেন তিনি।

রাত সাড়ে আটটা বেজে গেল। কিন্তু বিকাশে টাকা আসার কোন খবরই নাই। মেজাজটা একমুহুর্তেই খিচে গেল মাজহার সাহেবের। কিন্তু না, এত অল্পতে রেগে গেলে চলবে না। প্রচন্ড খিদে লেগেছে, আগে কিছু খেতে হবে। মনে মনে সামলিয়ে নিয়ে পাশের গ্রিল হোটেলে ঢুকে ভাত, ডাল আর সবজির অর্ডার দিলেন তিনি।

খাওয়ার মাঝে হঠাৎ টিভিতে নিজের নাম শুনে কান খাড়া হয়ে গেল ফরহাদ মাজহারের! টিভি স্ক্রিনে তার বাল্য বন্ধু রিজভীকে একটা কাগজ হাতে দেখা যাচ্ছে। তবে রিজভীর মুখ দিয়ে যেসব কথা বেড়িয়ে আসছে, সেগুলো তিনি তার নিজের কানকেও বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না। বাল্যবন্ধু রিজভী একনাগাড়ে বলেই যাচ্ছে, "এই বাকশালি সরকার মাজহারকে গুম করেছে, তাকে খুন করেছে। বিরোধীমত দমাতে সরকারের এই ফেসিস্ট মনোভাবের কারনে মাজহার হারিয়ে গিয়েছে, ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা।"

ভালই বিপদে পড়া হল... মনে মনে ভাবছেন মাজহার সাহেব। এই ফরিদাটা সবকিছু ভন্ডুল করে দিল। টাকা তো দিলই না, উলটা গবেট রিজভীটাকে বলে দিল। এখন নিশ্চয় পুলিশ আমাকে খুজে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে বিলটা দিয়ে বের হয়ে সোজা বাস স্টেশনে চলে গেলেন তিনি। খুলনা থেকে পালাতে হবে। বুদ্ধি করে নাম পালটিয়ে গফুর নামে যশোরগামী হানিফ বাসের একটি টিকেট কাটলেন তিনি। একদম পেছনের সিটে গিয়ে মাথায় আরেকটা লুঙ্গি পেচিয়ে চুপচাপ বসে সারাদিনের কথা ভাবতে লাগলেন তিনি। কি থেকে কি হয়ে গেল। ফরিদাটা যে এত খারাপ,  তা আগে কখনো ঘুনাক্ষরেও মনে হয় নি। এখন খুব আফসোস লাগছে তার।

ঘুমিয়ে পড়েছিলেন মাজহার সাহেব। হঠাৎ চিল্লাচিল্লি শুনে ঘুম ভাঙ্গল। কিছুক্ষন মনে করতে পারছিলেন না তিনি কোথায় আছেন। ধীরে ধীরে স্থির হবার পর বুঝতে পারলেন তিনি হানিফ বাসে আছেন, এবং বাসটি হাইওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বাসের যাত্রীরা ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করছে কাহিনী কি, কিন্তু ড্রাইভার নিরুত্তর। ইচ্ছে করছিল ড্রাইভারের কাছে গিয়ে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে। ব্যাটা ফাইজলামি করস, মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামায় রাখছস! কিন্তু লোকে চিনে ফেলার ভয়ে এই ভুলটি করতে চাচ্ছেন না তিনি।

প্রায় ৪০ মিনিট পর একদল কালো পোশাক পরা লোককে বাসে উঠতে দেখলেন মাজহার সাহেব। ওরা কারা? দস্যু নইতো? আগের যুগের দস্যুরা তো এভাবেই কালো পোশাক পরে ডাকাতি করত! কিন্তু না, পরক্ষনেই বুঝতে পারলেন এরা আসলে র‍্যাব। পেছনের সিটে চট করে মাথায় এক্সট্রা লুঙ্গিটা বেঁধে ঘুমের ভাণ ধরলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। এক কালো পোশাকের ছোকরা এসে তার মাথার লুঙ্গি ধরে টানাটানি শুরু করল!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভয়ংকর ছাত্র ফ্রম নোয়াখালি

নায়িকা বুবলির ছবি দেখে শাকিব খান নিয়মিত হাত মারতো বাথরুমে গিয়ে: অপু বিশ্বাস